জিম প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় করা উত্তম। জিম সারা জীবন ধরে চালিয়েই যেতে হয়, কারন এর রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। এটা ছেড়ে দেয়া বা বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়।
কেউ যদি হঠাৎ জিম করা ছেড়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয় তবে তার ওজন বৃদ্ধি, শক্তি হ্রাস, শরীরচর্চার ক্ষমতা হ্রাস, শরীরের নমনীয়তা হ্রাস সহ নানা বিধ সমস্যা হতে পারে। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Contents
জিম ছেড়ে দিলে শরীরের যেসব পরিবর্তন হতে পারে:
- ওজন বৃদ্ধি: জিম ছেড়ে দিলে শরীরের পেশী টিস্যু কমতে শুরু করে। পেশী টিস্যু শরীরের ক্যালোরি বার্ন করার হার বাড়ায়। তাই পেশী টিস্যু কমে গেলে শরীরের ক্যালোরি বার্ন করার হার কমে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
- শক্তি হ্রাস: জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের পেশী শক্তিশালী হয়। জিম ছেড়ে দিলে শরীরের পেশী শক্তি হ্রাস পায়। ফলে শারীরিক কার্যকলাপের সময় ক্লান্তি অনুভূত হয়।
- শরীরচর্চার ক্ষমতা হ্রাস: জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা এবং হার্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। জিম ছেড়ে দিলে শরীরের এই ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে শারীরিক কার্যকলাপের সময় শ্বাসকষ্ট এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
- শরীরের নমনীয়তা হ্রাস: জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। জিম ছেড়ে দিলে শরীরের এই নমনীয়তা হ্রাস পায়। ফলে শারীরিক কার্যকলাপের সময় আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জিম ছেড়ে দেওয়ার পরও শরীরের এই পরিবর্তনগুলো এড়াতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন:
- নিয়মিত ব্যায়াম করা: জিম ছেড়ে দিয়েও নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। তবে, জিমে যে ধরনের ব্যায়াম করা হতো সে ধরনের ব্যায়াম না করে হালকা ব্যায়াম করা ভালো।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শরীরের ওজন এবং পেশী টিস্যু ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুমানো: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনর্গঠন এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।
জিম ছেড়ে দেওয়ার পরও শরীরের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
এক মাস জিম বন্ধ রাখলে কি হয়?
কেউ এক মাস জিম বন্ধ রাখলে তার শক্তি হ্রাস, ওজন বৃদ্ধি, শরীরচর্চার ক্ষমতা হ্রাস সহ আরো কিছু সমস্যা হতে পারে।
জিম বন্ধ রাখার পরও শরীরের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল যা আপনাকে জিম বন্ধ করার সময় আপনার শরীরের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে:
- সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন হালকা ব্যায়াম করুন। এটি আপনার পেশী টিস্যু এবং শরীরের কার্যকারিতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান। প্রোটিন, ফল এবং শাকসবজি সমৃদ্ধ খাবার খান।
- পর্যাপ্ত ঘুমান। প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
এই টিপসগুলি অনুসরণ করে আপনি জিম বন্ধ করার সময়ও আপনার শরীরকে সুস্থ এবং ফিট রাখতে পারেন।
জিম বন্ধ করার পর কি পেশি কমে যায়?
হ্যাঁ, জিম বন্ধ করার পর পেশি কমে যায়। জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের পেশী টিস্যু গঠিত হয়। জিম বন্ধ রাখলে শরীরের পেশী টিস্যু ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
জিম বন্ধ করার পর পেশি কমে যাওয়ার কারণ হলো:
- পেশী টিস্যু গঠনের জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন। জিম বন্ধ রাখলে পেশী টিস্যু গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা পায় না। ফলে পেশী টিস্যু ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
- পেশী টিস্যু ধরে রাখার জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। জিম বন্ধ রাখলে প্রোটিন গ্রহণ কমে যায়। ফলে পেশী টিস্যু ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
জিম বন্ধ করার পর পেশি কমে যাওয়ার হার নির্ভর করে বিভিন্ন কারণের উপর। যেমন:
- জিম বন্ধ করার সময়কাল: জিম বন্ধ করার সময়কাল যত বেশি হবে পেশি কমে যাওয়ার হার তত বেশি হবে।
- জিম করার আগে পেশীর পরিমাণ: জিম করার আগে পেশীর পরিমাণ যত বেশি হবে জিম বন্ধ করার পর পেশি কমে যাওয়ার হার তত কম হবে।
- প্রোটিন গ্রহণ: প্রোটিন গ্রহণ যত বেশি হবে জিম বন্ধ করার পর পেশি কমে যাওয়ার হার তত কম হবে।
জিম বন্ধ করার পর পেশি কমে যাওয়া রোধ করতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন:
- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা: সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন হালকা ব্যায়াম করা উচিত। কারণ এটি পেশী টিস্যু ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- পর্যাপ্ত ঘুমান: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনর্গঠন এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।
এই টিপসগুলি অনুসরণ করে আপনি জিম বন্ধ করার পরও আপনার পেশী টিস্যু ধরে রাখতে পারেন।
জিম ছেড়ে দিলে মানুষ মোটা হয় কেন?
জিম ছেড়ে দিলে মানুষ মোটা হয় কারণ জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের পেশী টিস্যু গঠিত হয়। পেশী টিস্যু শরীরের ক্যালোরি বার্ন করার হার বাড়ায়। তাই পেশী টিস্যু কমে গেলে শরীরের ক্যালোরি বার্ন করার হার কমে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
জিম ছেড়ে দিলে মানুষ মোটা হওয়ার আরও কিছু কারণ হলো:
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: জিম করার সময় অনেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। কিন্তু জিম ছেড়ে দিলে অনেকেই আবার আগের খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যায়। এতে ক্যালোরি গ্রহণ বেড়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
- অলসতা: জিম করার পর শরীর অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। কিন্তু জিম ছেড়ে দিলে শরীর অলস হয়ে যায়। এতে ক্যালোরি বার্ন কমে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
- মানসিক চাপ: জিম করার সময় অনেকেই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু জিম ছেড়ে দিলে মানসিক চাপ বাড়তে পারে। এতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং অলসতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
জিম ছেড়ে দিলেও ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন:
- নিয়মিত ব্যায়াম করা: সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন হালকা ব্যায়াম করা উচিত। এটি শরীরের পেশী টিস্যু ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ফল এবং শাকসবজি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- পর্যাপ্ত ঘুমান: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনর্গঠন এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা উচিত।
এই টিপসগুলি অনুসরণ করে আপনি জিম ছেড়ে দিলেও আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।