পিরিয়ডের সময় জিমে যাওয়া উচিত? সুবিধা ও ঝুঁকি সমূহ

আমাদের মাঝে অনেকে প্রশ্ন করেন পিরিয়ডের সময় জিমে যাওয়া উচিত? বা পিরিয়ডের সময় জিম বন্ধ রাখা উচিত। আজ আমরা এ পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিবো বিস্তারিত।

এক কথায় উত্তর দিলে বলতে হবে হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় জিমে যাওয়া উচিত। পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করা আপনার শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করতে পারে।

এটি আপনাকে আরও শক্তিশালী এবং ফিট হতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতেও সাহায্য করতে পারে। তাই শারীরিক কোন সমস্যা না হলে এ সময় জিম বা ব্যায়াম করা উত্তম।

 

পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করলে কী হয়?

পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করলে অনেক উপকার হয়। এটি আপনার শরীরকে ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে, আপনার শক্তির স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করলে যেসব উপকার হয় সেগুলি হল:

ব্যথা এবং অস্বস্তি কমানো: পিরিয়ডের সময় ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে ব্যায়াম সাহায্য করতে পারে। ব্যায়াম প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ব্যথা এবং অস্বস্তির জন্য দায়ী।

শক্তির স্তর বাড়ানো: পিরিয়ডের সময় অনেক মহিলা ক্লান্ত বোধ করেন। ব্যায়াম আপনার শক্তির স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে আরও শক্তিশালী এবং ফিট বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

মেজাজ উন্নত করা: পিরিয়ডের সময় অনেক মহিলা মেজাজ পরিবর্তনের সম্মুখীন হন। ব্যায়াম আপনার মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে আরও ভাল বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

 

জিমে পিরিয়ড হলে কি করবো?

জিমে পিরিয়ড হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

  • আপনার শরীরের অবস্থা বিবেচনা করুণ। যদি আপনি অতিরিক্ত ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন তবে বিশ্রাম নিন।
  • হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। আপনার শরীর পিরিয়ডের সময় আরও ক্লান্ত হতে পারে, তাই হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার তীব্রতা বাড়ান।
  • পর্যাপ্ত তরল পান করুন। পিরিয়ডের সময় আপনার শরীর আরও বেশি তরল হারাতে পারে, তাই পর্যাপ্ত তরল পান করা গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে কিছু নির্দিষ্ট টিপস রয়েছে যা আপনাকে জিমে পিরিয়ডের সময় আরও আরামদায়ক বোধ করতে সাহায্য করতে পারে:

  • আরামদায়ক এবং শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য পোশাক পরুন।
  • একটি ভাল-ফিটিং মেন্সট্রুয়াল প্যাড বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
  • আপনার সাথে একটি অতিরিক্ত প্যাড বা টিস্যু রাখুন।
  • আপনার সাথে একটি পরিষ্কার তোয়ালে রাখুন।
  • আপনার সাথে একটি পরিষ্কার পরিবর্তন করার জন্য একটি পরিষ্কার পোশাক রাখুন।

 

পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করা ঝুঁকিপূর্ন?

সাধারণত, পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, এটি কিছু ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করার সময় কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি হল:

  • আঘাত: পিরিয়ড চলাকালীন, আপনার শরীর আরও ক্লান্ত হতে পারে, যা আঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • রক্তপাত বা ব্যথা বৃদ্ধি: কিছু ক্ষেত্রে, ব্যায়াম রক্তপাত বা ব্যথা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • অস্বস্তি: পিরিয়ড চলাকালীন, আপনার শরীর আরও তরল হারাতে পারে, যা হতাশাজনক হতে পারে।

নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে:

  • আপনি যদি রক্তপাত বা ব্যথায় ভুগছেন তবে ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
  • আপনি যদি কোনও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
  • আপনি যদি নতুন ব্যায়াম শুরু করছেন তবে ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং আপনার তীব্রতা বাড়ান।

আপনি যদি পিরিয়ড চলাকালীন ব্যায়াম করার সময় কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব করেন তবে অবিলম্বে বিশ্রাম নিন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

 

পিরিয়ডের সময় কি কি করা উচিত নয়?

পিরিয়ডের সময় নিম্নলিখিত জিনিসগুলি করা উচিত নয়:

ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পান করা: ক্যাফিন মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় চা, কফি, কোমল পানীয় এবং এনার্জি ড্রিংকের মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পান করা এড়িয়ে চলুন।

অ্যালকোহল পান করা: অ্যালকোহল মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া: প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলিতে প্রায়ই প্রচুর পরিমাণে লবণ, চিনি এবং কৃত্রিম সংযোজন থাকে যা মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

ভাজা খাবার খাওয়া: ভাজা খাবার হজম করতে কঠিন হতে পারে এবং পেটে ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় ভাজা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

টক খাবার খাওয়া: টক খাবার মাসিকের ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় টক খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

বেশি ভারী ব্যায়াম করা: মাসিকের সময় শরীর দুর্বল থাকে। তাই এই সময়ে বেশি ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়। হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।

অতিরিক্ত ঘুমানো: অতিরিক্ত ঘুমানো মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। তাই স্বাভাবিক ঘুমের সময় মেনে চলুন।

মানসিক চাপ নেওয়া: মানসিক চাপ মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। তাই এই সময়ে মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।

 

এছাড়াও, পিরিয়ডের সময় নিম্নলিখিত জিনিসগুলি করা উচিত:

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা: পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে পারে।
  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: পুষ্টিকর খাবার শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • হালকা ব্যায়াম করা: হালকা ব্যায়াম মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া: পর্যাপ্ত বিশ্রাম মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমানো মাসিকের ব্যথা এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।

যদি পিরিয়ডের সময় আপনার প্রচণ্ড ব্যথা বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

 

পিরিয়ডের সময় কোন কোন ব্যায়াম করা যায় বা নিয়মিত মাসিক হওয়ার ব্যায়াম

পিরিয়ডের সময় কোন কোন ব্যায়াম করা যায় বা নিয়মিত মাসিক হওয়ার জন্য যে সকল ব্যায়াম করা জরুরী তা নিচে দেয়া হলো।

পিরিয়ডের সময় নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলি করা যেতে পারে:

  • হাঁটা: হাঁটা একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম যা আপনার শরীরকে সক্রিয় রাখতে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • সাইক্লিং: সাইক্লিং একটি আরামদায়ক এবং কার্যকর ব্যায়াম যা আপনার হৃদয়কে স্বাস্থ্যকর রাখতে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • জলরোধী যোগাসন: জলরোধী যোগাসন একটি দুর্দান্ত উপায় আপনার শরীরকে সচল রাখতে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে।
  • স্ট্রেচিং: স্ট্রেচিং আপনার পেশীগুলিকে শিথিল করতে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রশ্বাস ব্যায়াম: প্রশ্বাস ব্যায়াম আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করার কিছু সুবিধা হল:

  • মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • মনকে শান্ত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • হৃদয়কে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
  • পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
  • শরীরের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে।

 

পিরিয়ড কিংবা মাসিকের সময় কি ব্যায়াম করা যাবে? [ভিডিও] (ISSA) সার্টিফাইড ফিটনেস ট্রেইনার “নাহরায় জান্নাত”

 

পিরিয়ডের সময় সাইকিলিং করা যাবে?

হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় সাইক্লিং করা যেতে পারে। সাইক্লিং একটি হালকা এবং কার্যকর ব্যায়াম যা আপনার শরীরকে সচল রাখতে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সাইক্লিং পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে কারণ এটি আপনার পেশীগুলিকে শিথিল করতে এবং রক্ত ​​প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে। সাইক্লিং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে।

পিরিয়ডের সময় সাইক্লিং করার জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করুন:

  • একটি আরামদায়ক সাইকেল ব্যবহার করুন। আপনার সাইকেলটি আপনার শরীরের জন্য সঠিক মাপের এবং আরামদায়ক হওয়া উচিত।
  • সঠিক সাইকেলিং অবস্থান বজায় রাখুন। আপনার পিঠ সোজা রাখুন এবং আপনার কোমরটি সাইকেলের উপরে রাখুন।
  • নিয়মিত বিরতি নিন। যদি আপনি ক্লান্ত বোধ করেন তবে বিশ্রাম নিন।

 

পিরিয়ডের সময় দড়ি লাফ করা যাবে?

না, দড়ি লাফ হচ্ছে ফুল বডি কার্ডিও এবং এতে প্রচুর ক্যালরি বার্ন হয়। পিরিয়ডের প্রথম ৩ দিন কোনরকম হার্ড কার্ডিও করা উচিত নয়। কারণ, তখন ইউট্রাস একটু নিচে নেমে আসে।

তাই সাধারণত পিরিয়ডের প্রথম ৩ দিন দড়ি লাফ বা এই ধরনের কিছু না করাই উত্তম। এ সময় স্ট্রেচিং, ওয়াকিং, হাল্কা জগিং করায় কোন প্রকার সমস্যা নেই।

 

পিরিয়ডের সময় দৌড়ানো যাবে?

পিরিয়ডের সময় থেকে প্রথম ২ দিন মানে ৪৮ ঘন্টা দৌড়ানো যাবে না। তার পর থেকে আপনি হালকা হাকলা করে দৌড়ানো করতে পারবেন এবং তা ধীরে ধীরে বাড়াতে পারবেন।

তাই পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২ দিন বা কিছু দিন পর থেকে আপনি রানিং বা দৌড়ানো শুরু করুণ। কারও কারও ক্ষেত্রে আরো বেশি সময় লাগতে পারে।

 

শেষ কথা

আসলে পিরিয়ডের সময় জিমে যাওয়া বা ব্যায়াম করা উচিত বা উচিত কিনা এটা অনেক আংশে নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থার উপর।

আপনি যদি ভালো বোধ করেন বা জিম বা ব্যায়াম করতে আপনার কোন ধরনের সমস্যা না হয় তবে তা ধারাবাহিক ভাবে করতে কোন সমস্যা নেই।

তারপরও অবশ্যই এ সময় আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তিনিই উত্তম পরিকল্পনা তৈরী করে দিবে।