জিম করলে কি লম্বা হওয়া যায়? – লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম

আমাদের মধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে জিম করলে কি লম্বা হওয়া যায় বা জিম কি উচ্চতার উপর প্রভাব ফেলে? আজ আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

জিম করলে লম্বা হওয়া যায় কিনা তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক অবস্থার উপর। সাধারণত, বয়স ১৮ বছরের আগে জিম করলে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কারণ, এই বয়সে হাড় এবং হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি এখনও খোলা থাকে। এই প্লেটগুলি খোলা থাকলে, জিমে ব্যায়াম করলে শরীরের গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

তবে, ১৮ বছরের পরও জিম করলে কিছুটা লম্বা হওয়া যায়। তবে, এই ক্ষেত্রে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ১৮ বছরের পর জিমে ব্যায়াম করলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, যা হাড়কে মজবুত করে। এছাড়াও, জিমে ব্যায়াম করলে শরীরের পেশী বৃদ্ধি পায়, যা শরীরের উচ্চতাকে কিছুটা বাড়াতে পারে।

জিম করলে উচ্চতা বাড়ে না কমে?

জিম করলে উচ্চতা বাড়ে না কমে তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক অবস্থার উপর।

জিমে উচ্চতার জন্য কিছু কার্যকর ব্যায়াম হল:

  • পুল-আপ: এই ব্যায়ামটিতে শরীরের ওজনকে নিজের হাতে তুলে ধরতে হয়। এই ব্যায়ামটিতে পিঠের পেশীগুলি শক্তিশালী হয়, যা শরীরকে সোজা করে এবং উচ্চতাকে কিছুটা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • স্কোয়াট: এই ব্যায়ামটিতে শরীরের ওজনকে পায়ের উপরে দিয়ে দাঁড়ানো হয়। এই ব্যায়ামটিতে পায়ের পেশীগুলি শক্তিশালী হয়, যা শরীরের উচ্চতাকে কিছুটা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হাঁটা: হাঁটা একটি সহজ ব্যায়াম, যা নিয়মিত করলে শরীরের হাড় এবং হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলিকে শক্তিশালী করে।

জিমে উচ্চতার জন্য কিছু টিপস:

  • একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। প্রশিক্ষক আপনাকে সঠিক ব্যায়াম পদ্ধতি শেখাতে পারবেন এবং আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
  • আপনার শারীরিক অবস্থা এবং লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যায়াম পরিকল্পনা করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত তিনবার ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত।
  • প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো শরীরের পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয়।

 

জিম করলে কি গ্রোথ বন্ধ হয়ে যায়?

না, জিম করলে গ্রোথ বন্ধ হয়ে যায় না। জিম করলে শরীরের পেশী বৃদ্ধি পায়। পেশী বৃদ্ধির ফলে শরীরের উচ্চতা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে, জিম করলে হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি বন্ধ হয়ে গেলে উচ্চতা বাড়ে না।

হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি সাধারণত বয়স ১৮ বছরের পর বন্ধ হয়ে যায়। এই বয়সের পরে জিম করলে শরীরের পেশী বৃদ্ধি পায়, তবে হাড়ের বৃদ্ধি হয় না। তাই জিম করলে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বাড়ে, তবে সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হয় না।

 

ঝুললে কি লম্বা হওয়া যায়?

না, ঝুললে লম্বা হওয়া যায় না। ঝুললে শরীরের পেশীগুলি প্রসারিত হয়, যা শরীরকে সোজা করে। এতে শরীরের উচ্চতা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে, এটি স্থায়ী নয়। ঝুললে হাড়ের বৃদ্ধি হয় না।

লম্বা হওয়ার জন্য হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি খোলা থাকতে হয়। বয়স ১৮ বছরের আগে হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি খোলা থাকে। এই বয়সে জিমে ব্যায়াম করলে শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে লম্বা হওয়া সম্ভব হয়।

ঝুললে শরীরের পেশীগুলি প্রসারিত হয়, যা শরীরকে সোজা করে। এতে শরীরের উচ্চতা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে, এটি স্থায়ী নয়। ঝুললে হাড়ের বৃদ্ধি হয় না। তাই ঝুললে লম্বা হওয়া যায় না।

 

দৌড়ালে কি লম্বা হওয়া যায়?

হ্যাঁ, দৌড়ালে কিছুটা লম্বা হওয়া যায়। দৌড়ানো একটি কার্ডিও ব্যায়াম, যা শরীরের হাড় এবং পেশী শক্তিশালী করে। এতে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

দৌড়ানোর ফলে শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, দৌড়ানোর ফলে শরীরের পেশীগুলি প্রসারিত হয়, যা শরীরকে সোজা করে। এতেও শরীরের উচ্চতা কিছুটা বাড়তে পারে।

তবে, দৌড়ানোর ফলে হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি বন্ধ হয়ে গেলে লম্বা হওয়া সম্ভব হয় না। হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলি সাধারণত বয়স ১৮ বছরের পর বন্ধ হয়ে যায়।

 

লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম

লম্বা হওয়ার জন্য অনেকেই বিভিন্ন উপায় ও ব্যায়াম চেষ্টা করে থাকেন। তবে, লম্বা হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম।

সঠিক পুষ্টি

লম্বা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে হবে। এছাড়াও, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

  • ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি-এর ভালো উৎস হলো সূর্যের আলো, ডিমের কুসুম, মাছ এবং দুগ্ধজাত খাবার।
  • ক্যালসিয়াম: ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হলো দুধ, দই, পনির, সবুজ শাকসবজি এবং বাদাম।
  • প্রোটিন: প্রোটিন পেশীর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রোটিনের ভালো উৎস হলো মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার এবং বাদাম।
  • আয়রন: আয়রন রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। আয়রনের ভালো উৎস হলো লাল মাংস, মাছ, ডিম, সবুজ শাকসবজি এবং বাদাম।

নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের হাড় এবং পেশী শক্তিশালী হয়। এতে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

লম্বা হওয়ার জন্য কিছু কার্যকর ব্যায়াম হল:

  • পুল-আপ: এই ব্যায়ামটিতে শরীরের ওজনকে নিজের হাতে তুলে ধরতে হয়। এই ব্যায়ামটিতে পিঠের পেশীগুলি শক্তিশালী হয়, যা শরীরকে সোজা করে এবং উচ্চতাকে কিছুটা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • স্কোয়াট: এই ব্যায়ামটিতে শরীরের ওজনকে পায়ের উপরে দিয়ে দাঁড়ানো হয়। এই ব্যায়ামটিতে পায়ের পেশীগুলি শক্তিশালী হয়, যা শরীরের উচ্চতাকে কিছুটা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হাঁটা: হাঁটা একটি সহজ ব্যায়াম, যা নিয়মিত করলে শরীরের হাড় এবং হাড়ের বৃদ্ধি প্লেটগুলিকে শক্তিশালী করে।

পর্যাপ্ত ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।

আরও পড়ুন: জিম করলে কি মোটা হওয়া যায়

 

লম্বা হওয়ার কিছু টিপস

  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার করুন। ধূমপান এবং অ্যালকোহল শরীরের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  • নিয়মিত ডাক্তারের সাথে চেকআপ করুন। আপনার ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবেন যে কিভাবে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।

 

লম্বা হওয়ার জন্য কিছু সতর্কতা

  • লম্বা হওয়ার জন্য কোন প্রকার ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত নয়। এই ধরনের ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  • লম্বা হওয়ার জন্য কোনও অস্ত্রোপচার করা উচিত নয়। এই ধরনের অস্ত্রোপচারগুলি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

 

লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা

লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বংশগত। তবে, সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।

 

শেষ কথা

উপসংহারে বলা যায়, জিম করলে লম্বা হওয়া যায় কিনা তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক অবস্থার উপর। ১৮ বছরের আগে জিম করলে লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে, ১৮ বছরের পরও জিম করলে কিছুটা লম্বা হওয়া যায়।