পেট ফাঁপা একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। গ্যাস কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নিন, যা আপনাকে দ্রুত মুক্তি দিতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেই সহজ সমাধানগুলো।
Contents
গ্যাস কমানোর কিছু সহজ উপায়
গ্যাস কমাতে আপনি কি কি করতে পারেন, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- খাবার ধীরে ধীরে খান
- কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন
- খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি করুন
- কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন
- প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন
এগুলো ছাড়াও আরও কিছু টিপস রয়েছে, যা আপনার গ্যাস কমাতে সহায়ক হতে পারে।
খাবার ধীরে ধীরে খান
খাবার তাড়াহুড়ো করে খেলে বেশি বাতাস পেটে ঢোকে। এর ফলে গ্যাস তৈরি হয়। তাই ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন।
- প্রতিটি খাবারের গ্রাস ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
- খাওয়ার সময় কথা কম বলুন।
- খাবারের মাঝে বিরতি নিন।
কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন
একবারে বেশি খাবার খেলে হজম হতে সমস্যা হয়, যা গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই অল্প অল্প করে খাবার খান।
- দিনে ৫-৬ বার অল্প পরিমাণে খাবার খান।
- পেট ভরে খাবার পরিবর্তে কিছুটা খালি রাখুন।
- রাতের খাবার হালকা করুন।
খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি করুন
খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- খাওয়ার পর অন্তত ১৫-২০ মিনিট হাঁটুন।
- হাঁটার সময় সোজা হয়ে থাকুন।
- নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করুন।
কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন
কিছু খাবার আছে যা গ্যাস তৈরি করতে পারে। যেমন:
- ডাল ও শিম জাতীয় খাবার
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকলি
- পেঁয়াজ ও রসুন
- ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
- কৃত্রিম মিষ্টি যুক্ত খাবার
এই খাবারগুলো পরিহার করে গ্যাস উৎপাদন কমাতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন
পর্যাপ্ত জল পান করলে হজম ভালো হয় এবং গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- দিনে অন্তত ৮ গ্লাস জল পান করুন।
- খাবার খাওয়ার আগে ও পরে জল পান করুন।
- ফলের রস ও অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করুন।
গ্যাসের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া টোটকা
গ্যাসের সমস্যা কমাতে কিছু ঘরোয়া টোটকা বেশ কার্যকরী। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
- আদা
- জোয়ান
- হিং
- লেবু জল
- পুদিনা পাতা
এগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আদা
আদা হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমাতে খুবই উপযোগী।
- আদা কুচি করে চিবিয়ে খান।
- আদা চা পান করুন।
- খাবারে আদা ব্যবহার করুন।
জোয়ান
জোয়ানের মধ্যে থাইমল নামক একটি উপাদান থাকে, যা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
- ১ চামচ জোয়ান চিবিয়ে খান।
- গরম জলে জোয়ান মিশিয়ে পান করুন।
- জোয়ান তেল পেটে মালিশ করুন।
হিং
হিং গ্যাস কমাতে খুবই কার্যকরী। এটি পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি কমায়।
- গরম জলে হিং মিশিয়ে পান করুন।
- হিং পেস্ট পেটে লাগান।
- রান্নার সময় হিং ব্যবহার করুন।
লেবু জল
লেবু জল হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

- গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
- লেবুর শরবত পান করুন।
- খাবারের সাথে লেবু ব্যবহার করুন।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা পেটের গ্যাস কমাতে এবং হজমক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- পুদিনা পাতা চিবিয়ে খান।
- পুদিনা চা পান করুন।
- পুদিনার শরবত পান করুন।
গ্যাসের সমস্যা কমাতে যোগা ও ব্যায়াম
কিছু যোগা ও ব্যায়াম আছে যা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
- পবনমুক্তাসন
- মার্জারাসন
- বাটারফ্লাই পোজ
এগুলো নিয়মিত করলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পবনমুক্তাসন
এই আসনটি গ্যাস কমাতে খুবই উপযোগী। এটি পেট থেকে গ্যাস বের করে দিতে সাহায্য করে।
- প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- তারপর হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন।
- হাত দিয়ে হাঁটু ধরে পেট চেপে ধরুন।
- শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা হাঁটুতে লাগানোর চেষ্টা করুন।
- ২০-৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকুন।
- ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে যান।
মার্জারাসন
এই আসনটি পেটের পেশী শক্তিশালী করে এবং হজমক্ষমতা বাড়ায়।
- প্রথমে হাঁটু ও হাতের উপর ভর দিয়ে বসুন।
- শ্বাস নিতে নিতে মেরুদণ্ড নীচের দিকে বাঁকান এবং মাথা উপরের দিকে তুলুন।
- শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মেরুদণ্ড উপরের দিকে বাঁকান এবং থুতনি বুকের কাছে আনুন।
- ১০-১৫ বার এটি করুন।
বাটারফ্লাই পোজ
এই আসনটি পেটের গ্যাস কমাতে এবং হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- প্রথমে সোজা হয়ে বসুন।
- তারপর দুই পায়ের পাতা একসঙ্গে জোড়া করুন।
- হাঁটু দুটোকে প্রজাপতির ডানার মতো উপরে-নীচে করুন।
- ৩০-৪০ বার এটি করুন।
গ্যাস কমাতে সহায়ক পানীয়
কিছু পানীয় গ্যাস কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। সেগুলো হলো:
- আদা চা
- ক্যামোমিল চা
- পেঁপে জুস
এসব পানীয় হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
আদা চা
আদা চা হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস কমাতে খুবই উপযোগী।
- আদা কুচি করে জলে ফুটিয়ে নিন।
- চায়ের মতো করে পান করুন।
- স্বাদ বাড়াতে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
ক্যামোমিল চা
ক্যামোমিল চা পেটের গ্যাস কমাতে এবং হজমক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- গরম জলে ক্যামোমিল টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখুন।
- কিছুক্ষণ পর টি ব্যাগ তুলে চা পান করুন।
- এটি রাতে ঘুমানোর আগে পান করা ভালো।
পেঁপে জুস
পেঁপে জুস হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
- পাকা পেঁপে কেটে ব্লেন্ডারে জুস তৈরি করুন।
- নিয়মিত এই জুস পান করুন।
- এটি পেটের জন্য খুবই উপকারী।
কোন খাবারগুলো গ্যাস তৈরি করে?
কিছু খাবার আছে যা গ্যাস তৈরি করতে পারে। সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার
- ফ্যাটি খাবার
- কার্বোনেটেড পানীয়
এই খাবারগুলো এড়িয়ে চললে গ্যাস উৎপাদন কমানো যায়।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার
যদিও ফাইবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তবে অতিরিক্ত ফাইবার গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- ডাল ও শিম জাতীয় খাবার
- ব্রোকলি ও বাঁধাকপি
- পেঁয়াজ ও রসুন
এগুলো পরিমিত পরিমাণে খান।
ফ্যাটি খাবার
ফ্যাটি খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয়, যা গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
- ফাস্ট ফুড
- বেশি তেলযুক্ত রান্না
এগুলো এড়িয়ে চলুন।
কার্বোনেটেড পানীয়
কার্বোনেটেড পানীয় যেমন সোডা ও কোমল পানীয় গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- এগুলো পরিহার করুন।
- ফলের জুস বা জল পান করুন।
গ্যাস কমাতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন
কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন গ্যাস কমাতে সাহায্য করতে পারে। যেমন:
- ধূমপান পরিহার করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- মানসিক চাপ কমান
এগুলো আপনার হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ধূমপান পরিহার করুন
ধূমপান হজমক্ষমতা কমিয়ে গ্যাস তৈরি করতে পারে।

- ধূমপান পরিহার করুন।
- ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করলে হজমক্ষমতা বাড়ে এবং গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।
- হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগা করতে পারেন।
মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপ হজমক্ষমতা কমিয়ে গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- মানসিক চাপ কমাতে যোগা ও মেডিটেশন করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
- নিজের পছন্দের কাজ করুন।
গ্যাস কমাতে ঔষধ
কিছু ঔষধ গ্যাস কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। সাধারণত যে ঔষধগুলো ব্যবহার করা হয়:
- অ্যান্টাসিড
- সিমেথিকোন
এগুলো গ্যাস কমাতে দ্রুত সাহায্য করে।
অ্যান্টাসিড
অ্যান্টাসিড পেটের অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে, যা গ্যাস কমাতে সহায়ক।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টাসিড গ্রহণ করুন।
- এটি খাবার পরে খেতে পারেন।
সিমেথিকোন
সিমেথিকোন গ্যাস তৈরি হওয়া বুদবুদগুলোকে ভেঙে দেয়, যা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিমেথিকোন গ্রহণ করুন।
- এটি খাবার পরে খেতে পারেন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
সাধারণত গ্যাসের সমস্যা ঘরোয়া উপায়ে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন:
- পেটে অতিরিক্ত ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- মলত্যাগে পরিবর্তন
- ওজন কমে যাওয়া
এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Key Takeaways
- খাবার ধীরে ধীরে খান এবং অল্প পরিমাণে গ্রহণ করুন।
- আদা, জোয়ান, হিং, লেবু জল, ও পুদিনা পাতা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
- পবনমুক্তাসন, মার্জারাসন, ও বাটারফ্লাই পোজ যোগা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, ফ্যাটি খাবার, ও কার্বোনেটেড পানীয় পরিহার করুন।
- ধূমপান পরিহার করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ও মানসিক চাপ কমান।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
এখানে গ্যাসের সমস্যা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. গ্যাসের সমস্যা কেন হয়?
গ্যাসের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন: খাবার হজম না হওয়া, কিছু খাবার খাওয়া, তাড়াহুড়ো করে খাবার গ্রহণ, এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন।
২. গ্যাসের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তির উপায় কী?
গ্যাসের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য আদা, জোয়ান, হিং, লেবু জল, ও পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, হালকা ব্যায়াম ও যোগা করতে পারেন।
৩. কোন খাবারগুলো গ্যাস তৈরি করে?
ডাল, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁয়াজ, রসুন, ভাজা খাবার, এবং কার্বোনেটেড পানীয় গ্যাস তৈরি করতে পারে।
৪. গ্যাসের সমস্যা কমাতে কোন যোগাসনগুলো সহায়ক?
পবনমুক্তাসন, মার্জারাসন, ও বাটারফ্লাই পোজ গ্যাসের সমস্যা কমাতে সহায়ক। এগুলো পেট থেকে গ্যাস বের করে দিতে সাহায্য করে।
৫. গ্যাসের সমস্যার জন্য কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
পেটে অতিরিক্ত ব্যথা, বমি বমি ভাব, মলত্যাগে পরিবর্তন, এবং ওজন কমে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি গ্যাসের সমস্যা কমাতে পারেন এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।


