ব্যায়ামের পর মাসল ব্যথা? দ্রুত মুক্তির ৫ উপায়!

শরীরের যত্নে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। কিন্তু ব্যায়ামের পরেই শরীরে অসহ্য ব্যথা! একে বলা হয় DOMS (Delayed Onset Muscle Soreness)। ব্যায়ামের পর এই ব্যথা কমাতে চান? তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য।

কী টেকওয়ে:

  • ব্যায়ামের পরে DOMS (বিলম্বিত সূত্র পেশী ব্যথা) কমাতে দ্রুত এবং কার্যকর উপায়গুলি জানুন।
  • DOMS কী, কেন হয় এবং এর লক্ষণগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাবেন।
  • ব্যথা কমাতে ঘরোয়া প্রতিকার, ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
  • কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তা জানতে পারবেন।

ব্যায়ামের পরে মাসল পেইন বা DOMS (Delayed Onset Muscle Soreness) একটি খুবই পরিচিত সমস্যা। নতুন ব্যায়াম শুরু করলে অথবা ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়ালে এই ব্যথা হতে দেখা যায়। কিন্তু এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? চলুন, জেনে নেওয়া যাক দ্রুত এবং কার্যকরী কিছু উপায়।

Contents

DOMS কী এবং কেন হয়?

DOMS (Delayed Onset Muscle Soreness) হল ব্যায়ামের পরে পেশিতে ব্যথা। এটি সাধারণত ব্যায়াম করার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পরে শুরু হয় এবং ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়।

কিন্তু DOMS কেন হয়, জানেন কি?

  • পেশীর মাইক্রোটিয়ার (Muscle Microtears): ব্যায়ামের সময় পেশীতে ছোট ছোট ছিঁড়ে যায়।
  • ** প্রদাহ (Inflammation):** এই ছিঁড়ে যাওয়া পেশীগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  • ল্যাকটিক অ্যাসিড: ব্যায়ামের সময় ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হওয়ার কারণেও ব্যথা হতে পারে।

DOMS মূলত নতুন বা অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে হয়।

DOMS-এর লক্ষণগুলো কী কী?

DOMS হলে আপনি কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। যেমন-

  • পেশীতে ব্যথা এবং অস্বস্তি।
  • পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • শরীরের নড়াচড়া করতে অসুবিধা হওয়া।
  • পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া।

এই লক্ষণগুলো সাধারণত কয়েক দিন পর্যন্ত থাকে।

DOMS থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

মাসল পেইন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় এবং ব্যায়াম রয়েছে, যা আপনাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে।

ব্যায়ামের পরে স্ট্রেচিং

ব্যায়ামের পরে স্ট্রেচিং করা DOMS কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। স্ট্রেচিং করলে পেশীগুলো নমনীয় হয় এবং রক্ত চলাচল বাড়ে।

  • প্রতিটি স্ট্রেচ কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
  • ধীরে ধীরে স্ট্রেচ করুন, ঝাঁকুনি দেবেন না।
  • ব্যায়ামের পরে পুরো শরীর স্ট্রেচ করুন।

স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে আপনি DOMS-এর তীব্রতা কমাতে পারেন।

হালকা ব্যায়াম বা অ্যাক্টিভ রিকভারি

কঠিন ব্যায়ামের পরে একেবারে বিশ্রাম না নিয়ে হালকা ব্যায়াম করা ভালো। একে অ্যাক্টিভ রিকভারি বলে।

  • হাঁটা বা জগিং করতে পারেন।
  • সাইকেল চালাতে পারেন।
  • সাঁতার কাটতে পারেন।

এগুলো পেশীর রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমায়।

বরফ বা তাপের ব্যবহার

ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক DOMS কমাতে খুব কার্যকর।

  • ব্যথার প্রথম ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় বরফ সেঁক দিন।
  • তারপরে গরম সেঁক দিন।

Google Image

বরফ প্রদাহ কমায় এবং গরম সেঁক রক্ত চলাচল বাড়ায়।

ম্যাসাজ

ম্যাসাজ পেশীর টান কমায় এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়।

  • হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন।
  • প্রয়োজনে ম্যাসাজ অয়েল ব্যবহার করুন।

ম্যাসাজ DOMS থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুম পেশী পুনরুদ্ধারের জন্য খুবই জরুরি।

  • প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • ঘুমের আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন।

ঘুমের সময় শরীর নিজেকে সারিয়ে তোলে।

সঠিক ডায়েট

সঠিক ডায়েট DOMS কমাতে সাহায্য করে।

  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • ভিটামিন ও মিনারেলস গ্রহণ করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

ডায়েট পেশী পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

কিছু কার্যকরী সাপ্লিমেন্ট

কিছু সাপ্লিমেন্ট DOMS কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সাপ্লিমেন্ট উপকারিতা গ্রহণ করার নিয়ম
ক্রিয়েটিন পেশী শক্তি বাড়ায় এবং পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। ব্যায়ামের আগে বা পরে ৫ গ্রাম।
বিসিএএ পেশী পুনরুদ্ধার এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের আগে, চলাকালীন বা পরে ৫-১০ গ্রাম।
ওমেগা-3 প্রদাহ কমায় এবং পেশী পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১-২ গ্রাম।
ভিটামিন ডি হাড় এবং পেশী স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতিদিন ১০০০-২০০০ আইইউ (IU)।
ম্যাগনেসিয়াম পেশী শিথিল করে এবং ব্যথা কমায়। প্রতিদিন ২৫০-৪০০ মিলিগ্রাম।

সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

DOMS কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায়

এছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যা DOMS কমাতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

হলুদ এবং আদা

হলুদ এবং আদা প্রদাহ কমাতে খুব উপকারী।

  • হলুদ দুধ পান করতে পারেন।
  • আদা চা খেতে পারেন।
  • রান্নায় হলুদ এবং আদা ব্যবহার করুন।

এগুলো প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে।

চেরি জুস

Google Image

চেরি জুস DOMS কমাতে সাহায্য করে।

  • ব্যায়ামের পরে চেরি জুস পান করুন।

এটি পেশী পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

এপসম সল্ট বাথ

গরম পানিতে এপসম সল্ট মিশিয়ে গোসল করলে পেশীর ব্যথা কমে।

  • ২০-৩০ মিনিট ধরে গোসল করুন।

এপসম সল্ট পেশী শিথিল করে।

ব্যায়ামের সময় কিছু সতর্কতা

ব্যায়াম করার সময় কিছু জিনিস মনে রাখলে DOMS থেকে বাঁচা যায়।

ধীরে ধীরে ব্যায়াম শুরু করুন

নতুন ব্যায়াম শুরু করলে ধীরে ধীরে শুরু করুন।

  • প্রথমে কম ওজন নিয়ে ব্যায়াম করুন।
  • ধীরে ধীরে ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়ান।

Google Image

এতে আপনার শরীর নতুন ব্যায়ামের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে।

ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন

ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্ম-আপ এবং পরে কুল-ডাউন করা জরুরি।

  • ওয়ার্ম-আপ পেশীগুলোকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করে।
  • কুল-ডাউন পেশীগুলোকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।

এগুলো DOMS কমাতে সাহায্য করে।

সঠিক ফর্ম

সঠিক ফর্মে ব্যায়াম করলে পেশীর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।

  • প্রশিক্ষকের সাহায্য নিন।
  • ভিডিও দেখে সঠিক ফর্ম শিখে নিন।

সঠিক ফর্ম DOMS এবং আঘাত থেকে বাঁচায়।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

সাধারণত DOMS কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • যদি ব্যথা খুব বেশি হয়।
  • যদি ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি থাকে।
  • যদি অন্য কোনো সমস্যা দেখা দেয়।

দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ব্যায়ামের পরে মাসল পেইন বা DOMS একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সঠিক নিয়ম মেনে চললে এবং কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলে আপনি সহজেই এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।

FAQs: ব্যায়ামের পর মাসল পেইন নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা

এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনাকে DOMS সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করবে।

প্রশ্ন ১: DOMS কতদিন স্থায়ী হয়?

সাধারণত, DOMS বা Delayed Onset Muscle Soreness প্রায় ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তবে, ব্যক্তিভেদে এবং ব্যায়ামের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে এর সময়কাল ভিন্ন হতে পারে।

প্রশ্ন ২: DOMS হলে কি ব্যায়াম করা উচিত?

DOMS হলে একেবারে ব্যায়াম বন্ধ না করে হালকা ব্যায়াম বা অ্যাক্টিভ রিকভারি করা যেতে পারে। হালকা হাঁটা, স্ট্রেচিং বা যোগা এক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। তবে, তীব্র ব্যথা থাকলে বিশ্রাম নেওয়া উচিত এবং পেশীর ওপর বেশি চাপ দেওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন ৩: DOMS থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য কী করা উচিত?

DOMS থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি কিছু জিনিস করতে পারেন:

  • ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক: ব্যথার প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টায় বরফ এবং তারপর গরম সেঁক দিন।
  • ম্যাসেজ: হালকা হাতে ম্যাসাজ করলে পেশীর টান কমে এবং রক্ত চলাচল বাড়ে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো পেশী পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি।
  • সঠিক ডায়েট: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

প্রশ্ন ৪: DOMS এবং সাধারণ পেশী ব্যথার মধ্যে পার্থক্য কী?

DOMS (Delayed Onset Muscle Soreness) এবং সাধারণ পেশী ব্যথার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো সময়কাল এবং কারণ। DOMS সাধারণত ব্যায়ামের ১২-২৪ ঘণ্টা পর শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়ে। অন্যদিকে, সাধারণ পেশী ব্যথা ব্যায়াম করার সময় বা तुरंत পরেই অনুভূত হয়।

প্রশ্ন ৫: DOMS প্রতিরোধের উপায় কী?

DOMS প্রতিরোধের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:

  • ধীরে ধীরে ব্যায়াম শুরু করুন: নতুন ব্যায়াম শুরু করলে প্রথমে কম তীব্রতায় শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বাড়ান।
  • ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন: ব্যায়ামের আগে ওয়ার্ম-আপ এবং পরে কুল-ডাউন করুন।
  • সঠিক ফর্ম: সঠিক ফর্মে ব্যায়াম করলে পেশীর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: পেশীকে পুনরুদ্ধার করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।