শারীরিক ব্যায়ামের সময় গান শোনা শুধু একটা অভ্যাস নয়, এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত অনেক কারণ। আপনি যখন ব্যায়াম করছেন, তখন পছন্দের গান আপনার মনোযোগ বাড়াতে, ক্লান্তি কমাতে এবং আরও বেশি উৎসাহ দিতে পারে।
তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক ব্যায়ামের সময় গান শোনার কিছু বৈজ্ঞানিক উপকারিতা এবং কী ভাবে নিজের জন্য সেরা প্লেলিস্ট তৈরি করবেন।
Contents
- ব্যায়ামের সময় মিউজিক: কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
- ব্যায়ামের জন্য কেমন গান নির্বাচন করবেন?
- সেরা প্লেলিস্ট তৈরির কিছু টিপস
- ব্যায়ামের সময় গান শোনার কিছু অসুবিধা
- ব্যায়ামের সময় কোন ধরনের গান বেশি উপযোগী?
- ব্যায়ামের সময় গান শোনার বিকল্প
- ব্যায়ামের সময় গান শোনার উপকারিতা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
- ব্যায়ামের সময় গান শোনার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
- ব্যায়ামের সময় গান: একটি সামগ্রিক আলোচনা
- মূল বিষয়গুলো
- প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন (FAQ)
ব্যায়ামের সময় মিউজিক: কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
ব্যায়ামের সময় গান শুনলে আপনার শরীরে এবং মনে কী কী পরিবর্তন হয়, তা একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মন ভালো করে তোলে
গান আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে। এই হরমোনটি আমাদের আনন্দ এবং ভালো লাগার অনুভূতি দেয়। ব্যায়ামের সময় গান শুনলে মন ভালো থাকে এবং ব্যায়াম করতে আরও বেশি ভালো লাগে।
মনোযোগ বাড়ায়
কাজের সময় বা ব্যায়ামের সময় অন্য অনেক চিন্তা আমাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। গান শুনলে বাইরের অন্যান্য চিন্তা থেকে মনকে সরিয়ে ব্যায়ামের দিকে মনোযোগ দেওয়া যায়।
ক্লান্তি কমায়
দেখা যায়, গান শুনলে ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি কম লাগে। বিশেষ করে যখন আপনি কঠিন ব্যায়াম করছেন, তখন গান আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে আপনাকে আরও বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করতে সাহায্য করে।
কর্মক্ষমতা বাড়ায়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গান শুনলে ব্যায়ামের কর্মক্ষমতা প্রায় ১৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর কারণ হল গান আপনার পেশিগুলোকে আরও সহজে কাজ করতে উৎসাহিত করে এবং আপনি আরও শক্তিশালী অনুভব করেন।
হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
ব্যায়াম করার সময় সঠিক তালে গান শুনলে হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এটি আপনার শরীরের ওপর ব্যায়ামের চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ব্যায়ামের জন্য কেমন গান নির্বাচন করবেন?
সব গান কিন্তু ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত নয়। ব্যায়ামের জন্য গান বাছাই করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হয়।
গানের তাল (BPM)
BPM মানে হল বিটস পার মিনিট। এটি দিয়ে গানের গতি মাপা হয়। ব্যায়ামের ধরনের ওপর নির্ভর করে গানের BPM নির্বাচন করা উচিত।
- ওয়ার্ম-আপের জন্য: কম BPM (৯০-১১০)
- কার্ডিও এবং দৌড়ের জন্য: মাঝারি BPM (১২০-১৪০)
- ওয়েট লিফটিংয়ের জন্য: বেশি BPM (১৪০-১৭০)
| ব্যায়ামের ধরন | BPM এর সীমা |
|---|---|
| ওয়ার্ম-আপ | ৯০-১১০ |
| কার্ডিও/দৌড় | ১২০-১৪০ |
| ওয়েট লিফটিং | ১৪০-১৭০ |
পছন্দের গান
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার পছন্দের গান নির্বাচন করা। যে গানগুলো আপনাকে আনন্দ দেয় এবং উৎসাহিত করে, সেই গানগুলোই ব্যায়ামের জন্য সেরা।
গানের ভাষা
গানের ভাষা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে যদি গানের কথাগুলো আপনাকে উৎসাহিত করে, তাহলে সেটি একটি অতিরিক্ত সুবিধা।
বিভিন্ন ধরনের গান
একই ধরনের গান শুনতে শুনতে একঘেয়েমি লাগতে পারে। তাই বিভিন্ন ধরনের গান দিয়ে প্লেলিস্ট তৈরি করলে ব্যায়াম আরও উপভোগ্য হবে।
সেরা প্লেলিস্ট তৈরির কিছু টিপস

নিজের জন্য একটি দারুণ প্লেলিস্ট তৈরি করতে আপনি কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন।
গানের তালিকা তৈরি করুন
প্রথমে আপনার পছন্দের গানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। এখানে আপনি আপনার ভালো লাগা সব গান যোগ করতে পারেন।
BPM অনুযায়ী সাজান
তালিকা তৈরি করার পর গানগুলোকে BPM অনুযায়ী সাজান। ওয়ার্ম-আপ, কার্ডিও এবং ওয়েট লিফটিংয়ের জন্য আলাদা আলাদা BPM-এর গান বাছাই করুন।
প্লেলিস্টটিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন
ব্যায়ামের সময় বিভিন্ন ধরনের গান শোনার জন্য প্লেলিস্টটিকে কয়েকটি ছোট ভাগে ভাগ করতে পারেন। যেমন – ওয়ার্ম-আপ, মূল ব্যায়াম এবং কুল-ডাউন।
নিয়মিত আপডেট করুন
একই গান বারবার শুনতে ভালো না লাগলে প্লেলিস্টটিকে নিয়মিত আপডেট করুন। নতুন গান যোগ করুন এবং পুরনো গান বাদ দিন।
অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন
Spotify, Gaana, কিংবা সাউন্ডক্লাউডের মতো অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপনি সহজেই নিজের প্লেলিস্ট তৈরি এবং শেয়ার করতে পারেন।
ব্যায়ামের সময় গান শোনার কিছু অসুবিধা
কিছু সুবিধা থাকার পাশাপাশি ব্যায়ামের সময় গান শোনার কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
সুরক্ষার অভাব
চারপাশের শব্দ শুনতে না পাওয়ার কারণে অনেক সময় সুরক্ষার অভাব হতে পারে। বিশেষ করে যখন আপনি বাইরে দৌড়াচ্ছেন বা সাইকেল চালাচ্ছেন, তখন চারপাশের গাড়ির হর্ন বা অন্য কোনো বিপদ সংকেত শুনতে না পেলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
মনোযোগে ব্যাঘাত
গান শোনার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে ব্যায়ামের সঠিক ফর্ম থেকে আপনার মন সরে যেতে পারে, যা ব্যায়ামের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
হেডফোনের সমস্যা
ব্যায়াম করার সময় হেডফোন তারযুক্ত হলে তা ব্যায়ামে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তারবিহীন হেডফোন ব্যবহার করাই এক্ষেত্রে ভালো।
ব্যায়ামের সময় কোন ধরনের গান বেশি উপযোগী?
ব্যায়ামের সময় আপনি বিভিন্ন ধরনের গান শুনতে পারেন, তবে কিছু বিশেষ ধরনের গান ব্যায়ামের জন্য বেশি উপযোগী।
এনার্জিটিক পপ গান
পপ গানগুলো সাধারণত খুব দ্রুত এবং উদ্দীপনাময় হয়, যা ব্যায়ামের সময় এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিক (EDM)
EDM গানগুলো তাদের শক্তিশালী বিট এবং সুরের জন্য পরিচিত। এগুলো কার্ডিও এবং দৌড়ের জন্য খুবই উপযোগী।
রক এবং মেটাল
রক এবং মেটাল গানগুলো তাদের জোরালো সুর এবং উদ্দীপনার জন্য ওয়েট লিফটিং এবং কঠিন ব্যায়ামের জন্য খুব ভালো।
র্যাপ এবং হিপহপ
র্যাপ এবং হিপহপ গানগুলো তাদের ছন্দের জন্য পরিচিত। এগুলো ব্যায়ামের সময় একটি নির্দিষ্ট গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ব্যায়ামের সময় গান শোনার বিকল্প
যদি আপনি গান শুনতে না চান, তাহলে ব্যায়ামের সময় অন্য কিছু বিকল্পও চেষ্টা করতে পারেন।
পডকাস্ট
পডকাস্ট শুনতে পারেন। এটি আপনাকে নতুন কিছু শিখতে বা জানতে সাহায্য করবে।
অডিওবুক
ব্যায়াম করার সময় অডিওবুক শুনলে সময়টা খুব দ্রুত কেটে যায় এবং আপনি একই সাথে ব্যায়াম ও বই পড়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
প্রকৃতির শব্দ
প্রকৃতির শব্দ যেমন পাখির ডাক, সমুদ্রের ঢেউ অথবা বৃষ্টির শব্দ শুনতে পারেন। এটি মনকে শান্ত রাখে এবং ব্যায়ামের সময় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।
ব্যায়ামের সময় গান শোনার উপকারিতা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
ব্যায়ামের সময় গান শোনা নিয়ে অনেকের মনে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। চলুন, সেগুলো দূর করা যাক।

১. গান শুনলে ব্যায়ামের ফর্ম নষ্ট হয়ে যায়: সঠিক গান নির্বাচন করলে এবং মনোযোগ ধরে রাখলে ব্যায়ামের ফর্ম নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
২. গান ছাড়া ব্যায়াম করা যায় না: গান একটি সহায়ক উপাদান হতে পারে, তবে এটা ছাড়া ব্যায়াম করা অবশ্যই সম্ভব।
৩. সব গান ব্যায়ামের জন্য ভালো: সব গান ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত নয়। সঠিক BPM এবং পছন্দের গান নির্বাচন করা জরুরি।
ব্যায়ামের সময় গান শোনার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যায়ামের সময় গান শুনতে খুব পছন্দ করি। এটা আমাকে আরও বেশি উৎসাহিত করে এবং ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। বিশেষ করে যখন আমি দৌড়াই, তখন আমার পছন্দের কিছু এনার্জিটিক গান আমাকে আরও দ্রুত দৌড়াতে সাহায্য করে।
আবার যখন আমি ওয়েট লিফটিং করি, তখন রক এবং মেটাল গানগুলো আমাকে আরও শক্তিশালী অনুভব করায়। গান আমার ব্যায়ামের রুটিনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ব্যায়ামের সময় গান: একটি সামগ্রিক আলোচনা
ব্যায়ামের সময় গান শোনা একটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে কিছু অসুবিধাও আছে। আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দের ওপর নির্ভর করে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে ব্যায়ামের সময় গান শুনবেন কিনা।
যদি আপনি গান শোনার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সঠিক গান নির্বাচন এবং সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
মূল বিষয়গুলো
- ব্যায়ামের সময় গান শুনলে মন ভালো থাকে এবং মনোযোগ বাড়ে।
- সঠিক BPM-এর গান নির্বাচন করা জরুরি।
- পছন্দের গান এবং বিভিন্ন ধরনের গান দিয়ে প্লেলিস্ট তৈরি করুন।
- সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে গান শুনুন।
- গান শোনার পাশাপাশি পডকাস্ট বা অডিওবুকও শুনতে পারেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন (FAQ)
এখানে ব্যায়ামের সময় গান শোনা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. ব্যায়ামের সময় গান শুনলে কি সত্যিই উপকার পাওয়া যায়?
অবশ্যই! গান আপনার মনকে চাঙ্গা রাখে, মনোযোগ বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায়। এটি আপনার ব্যায়ামের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২. ব্যায়ামের জন্য কোন ধরনের গান সবচেয়ে ভালো?
এটি আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত এনার্জিটিক পপ, ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিক (EDM), রক এবং র্যাপ গান ব্যায়ামের জন্য ভালো।
৩. গান বাছাই করার সময় BPM কেন গুরুত্বপূর্ণ?
BPM (বিটস পার মিনিট) গানের গতি নির্দেশ করে। ব্যায়ামের ধরনের ওপর নির্ভর করে সঠিক BPM নির্বাচন করলে ব্যায়াম আরও কার্যকর হয়।
৪. আমি কি ব্যায়ামের সময় হেডফোন ব্যবহার করতে বাধ্য?
না, আপনি হেডফোন ব্যবহার করতে বাধ্য নন। আপনি চাইলে গান না শুনেও ব্যায়াম করতে পারেন। তবে হেডফোন ব্যবহার করলে মনোযোগ ধরে রাখতে সুবিধা হয়।
৫. ব্যায়াম করার সময় গান শোনার কোনো ঝুঁকি আছে কি?
হ্যাঁ, কিছু ঝুঁকি আছে। চারপাশের শব্দ শুনতে না পাওয়ার কারণে সুরক্ষার অভাব হতে পারে। তাই ভলিউম কমিয়ে এবং সতর্কতার সাথে গান শোনা উচিত।
৬. কীভাবে ব্যায়ামের জন্য একটি ভালো প্লেলিস্ট তৈরি করব?
প্রথমে আপনার পছন্দের গানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। তারপর গানগুলোকে BPM অনুযায়ী সাজান এবং প্লেলিস্টটিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন। নিয়মিত প্লেলিস্টটি আপডেট করুন।