নতুন মায়েদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্ট তৈরি করা খুব জরুরি। কারণ এই সময়ে মায়ের শরীরকে সুস্থ রাখা এবং শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন। চলুন, জেনে নেই নতুন মায়েদের জন্য কেমন হওয়া উচিত একটি আদর্শ ডায়েট চার্ট।
Contents
নতুন মায়েদের ডায়েট চার্ট: আপনার জন্য সঠিক পথ
একজন নতুন মায়ের জীবনে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গর্ভাবস্থার পর শরীরকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা দরকার। তাই, আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কী কী থাকা উচিত, তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
প্রোটিনের গুরুত্ব
প্রোটিন শরীরের কোষ তৈরি এবং মেরামতের জন্য খুবই দরকারি। নতুন মায়েদের প্রতিদিন অন্তত ৭০-৮০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
- ডিমের সাদা অংশ
- চিকেন বা মাছ
- ডাল এবং শস্য
- পনির
এগুলো প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় এগুলো যোগ করতে পারেন।
ক্যালসিয়াম: হাড়ের সুরক্ষা
বুকের দুধ তৈরি করার সময় মায়ের শরীর থেকে প্রচুর ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়। তাই হাড়ের সুরক্ষার জন্য ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
- দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
- সবুজ শাকসবজি (যেমন পালং শাক)
- বাদাম
এই খাবারগুলো আপনার শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক।
আয়রন: রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি
গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের শরীরেই আয়রনের অভাব দেখা যায়। এই অভাব পূরণ করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
- কলিজা
- ডিম
- সবুজ শাকসবজি
- বিভিন্ন ধরনের ফল
এই খাবারগুলো আপনার শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ও মিনারেলস
ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- ফল (যেমন কমলা, পেয়ারা)
- সবজি (যেমন গাজর, মিষ্টি আলু)
এগুলো ভিটামিন ও মিনারেলসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
ফাইবার: হজমক্ষমতা বৃদ্ধি

ফাইবার হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
- আটা
- সব ধরনের ডাল
- বিভিন্ন ফল ও সবজি
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখে।
পর্যাপ্ত জল পান করা
বুকের দুধ তৈরি এবং শরীরের অন্যান্য কাজের জন্য প্রচুর জল পান করা দরকার। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত।
- জল
- ফলের রস
- স্যুপ
এগুলো আপনার শরীরের জলের চাহিদা পূরণ করবে।
একটি নমুনা ডায়েট চার্ট
এখানে একটি নমুনা ডায়েট চার্ট দেওয়া হলো, যা নতুন মায়েদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে, অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিতে হবে।
| সময় | খাবার | পরিমাণ |
|---|---|---|
| সকাল | ডিম সেদ্ধ/ডিমের অমলেট, সবজি রুটি | ২টি ডিম/২টি রুটি |
| সকালের নাস্তা | ফল (আপেল/কমলা), বাদাম | ১টি ফল, ১ মুঠো বাদাম |
| দুপুর | ভাত, মাছ/মাংস, ডাল, সবজি | ১ কাপ ভাত, ১ টুকরা মাছ/মাংস, ১ বাটি ডাল |
| বিকালের নাস্তা | দই/চিঁড়া, ফল | ১ কাপ দই/চিঁড়া, ১টি ফল |
| রাত | রুটি/ভাত, সবজি, ডাল | ২টি রুটি/১ কাপ ভাত, ১ বাটি সবজি, ডাল |
এই তালিকাটি একটি উদাহরণ মাত্র। আপনার শারীরিক অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী এটি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
বুকের দুধের জন্য খাদ্য
বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে কিছু খাবার বিশেষভাবে সহায়ক।
- মেথি
- জিরা
- মৌরি
- রসুন
এগুলো বুকের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
কিছু খাবার আছে যা নতুন মায়েদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার
- ফাস্ট ফুড
- অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার
- অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন
এগুলো আপনার এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কিছু জরুরি টিপস
- খাবার সময় ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান।
- প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং মানসিক চাপ কমান।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না।
এই টিপসগুলো আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থার পর ওজন কমানো
অনেকেই গর্ভাবস্থার পরে ওজন কমাতে চান। তবে, তাড়াহুড়ো করে ওজন কমানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং হালকা ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব।
- পর্যাপ্ত ঘুম
- নিয়মিত ব্যায়াম
- কম ক্যালোরির খাবার
এগুলো ওজন কমাতে সহায়ক।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনি কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা অনুভব করেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- পেটে ব্যথা
- অতিরিক্ত দুর্বলতা
- বমি বমি ভাব
এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নতুন মায়েদের সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা নতুন মায়েদের মনে প্রায়ই দেখা যায়।
প্রশ্ন ১: বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য কী কী খাবার খাওয়া উচিত?
উত্তর: বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য মেথি, জিরা, মৌরি, রসুন এবং প্রচুর পরিমাণে জল পান করা উচিত। এছাড়াও, সবুজ শাকসবজি ও ফল বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে সহায়ক।
প্রশ্ন ২: গর্ভাবস্থার পর কতদিন পর্যন্ত বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করা উচিত?
উত্তর: গর্ভাবস্থার পর অন্তত ৬ মাস পর্যন্ত বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করা উচিত। এই সময়ে আপনার শরীরকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা জরুরি।
প্রশ্ন ৩: ডায়েট চার্টে কী কী ভিটামিন থাকা দরকার?
উত্তর: ডায়েট চার্টে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকা দরকার। এগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৪: ওজন কমানোর জন্য কী ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?
উত্তর: ওজন কমানোর জন্য হালকা ব্যায়াম, যেমন – হাঁটা, যোগা এবং স্ট্রেচিং করা উচিত। ভারী ব্যায়াম গর্ভাবস্থার পরে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: কোন খাবারগুলো শিশুদের জন্য এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে?
উত্তর: কিছু খাবার শিশুদের জন্য এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যেমন – গরুর দুধ, ডিম, বাদাম এবং সয়াবিন। তাই, এই খাবারগুলো খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মূল বিষয়
- নতুন মায়েদের জন্য সঠিক ডায়েট চার্ট তৈরি করা খুব জরুরি।
- প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
- পর্যাপ্ত জল পান করা এবং ক্ষতিকর খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
- বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য মেথি, জিরা, মৌরি এবং রসুন খাওয়া উচিত।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিতে হবে।
এই বিষয়গুলো মনে রাখলে আপনি এবং আপনার শিশু উভয়েই সুস্থ থাকবেন।
শেষ কথা
নতুন মায়েদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনি সুস্থ থাকলে আপনার শিশুও সুস্থ থাকবে। যদি আপনার কোন বিশেষ প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন!